আমিন ইবনে আব্বাস
মূলত ইসলামী জীবন বিধান যে ‘কেয়ার টেকিংয়ের’ ভ্রাতৃত্ববোধকে ধারন করে দাঁড়িয়ে আছে, সেই ইসলামী জীবন বিধানের বাস্তব রুপটা কি, তা এ শতাব্দীর কেউই আমরা অনুধাবনে সক্ষম নই, কখনো দেখিনি। শুধু দেখেছেন সাহাবারা, অনেকটা মদিনায় এবং তারা পূর্ণাঙ্গ রুপটা দেখেছেন মক্কা বিজয়ের পরে। সে অর্থে আজকের দুনিয়াতে ইসলাম ‘কোন্ কোন্ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে’-বলা যায় এ সময়ের প্রয়োজনকে সামনে রাখলে তার প্রায়োগিক ধারনায় আমরা মোটেও ওয়াকবিহাল নই। অবশ্য এর একটা তাত্বিক রুপ বিভিন্ন লেখনীতে থাকায় সেটার বাস্তব রুপের অতি সামান্য কিছু অনুধাবনীয় হবারই কথা। নীচের উপমাটি খেয়াল করুন। মটর গাড়ি দেখেনি এমন একজন মানুষ শুধু এতটুকু জানে যে, তা মানুষ বা জিনিসপত্রকে স্থানান্তর করে। এখন তাকে যদি মটর গাড়ির কিছু পার্টস ও বাকি বড় আকারের পার্টস সমূহের ছবিগুলি একত্র মাটিতে বিছিয়ে দেখানো হয়, তবে তার পক্ষে ‘মটর গাড়ি কি জিনিস’ তা বোঝা কি সম্ভব? না, সম্ভব নয়। ইসলামের বাস্তব রুপকে অনুধাবণের ব্যাপারটাও ঠিক তেমনি-যখন তাকে লেখনী ও কথা দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। মুসলিম সমাজের দুরাবস্থা এই যে, ইসলামের ব্যক্তিগত জীবন যাত্রার অতি সামান্য কিছু মুসলিমরা পালন করে, আর ইসলামের বাদ বাকির সিংহভাগ লেখনীত বন্দী আছে। ফলে ইসলাম সম্পর্কে মুসলিমদের ধারণার উপমা সেই ব্যক্তির মতো যে মাটিতে বিছানো গাড়ির পার্টস থেকে গাড়ি সম্পর্কে যতটা ধারণা নিতে পারে ততটাই। আজ এটা গোটা উম্মাহর দায়িত্ব যে, ইসলামের সকল বিভাগকে স্ব স্ব স্থানে বসিয়ে তার বাস্তবরুপ সমাজ-দেশে দাড় করাতে হবে, যাতে সবাই এর অবিশ্বাস্য ক্ষমতা ও সার্বজনীন কল্যানকামীতা স্পষ্ট দেখতে ও বুঝতে পারে। এমনটা করতে পারলে মানবতা দ্বিতীয়বারের মতো ইসলামের বিস্ময়কর প্রায়োগিক রুপের ফলাফল হিসেবে, সেই ঐতিহাসিক সততা, ন্যাপরায়নতা আর সুবিচার পাবে, দুর্বলদের অধিকার প্রদান সহ ইসলামের শান্তি ও কল্যান মানবতা প্রত্যক্ষ করবে ইন শা আল্লাহ। আর তখনই আমরা দেখতে ও বুঝতে পারবো ‘আসলেই ইসলাম কি জিনিস’-তার আগে নয়। এখানে একটি বিষয় বুঝতে ভুল করা যাবে না যে, ইসলামের এই তিন অবস্থানকে (যার অল্পকিছু মুসলিমদের জীবনে আছে, বাদবাকি যা লেখনীতে আছে, আর ইসলামের সে সব বড় চ্যালেঞ্জ যা ইসলামী নিয়মে ‘ট্রায়াল এ্যান্ড এরোরের’ মাাধ্যমে চলমান যুগে প্রয়োগ করার অবস্থায় নেবার উপযোগী) একত্রিত করার কাজটিকে আল কুরআন সকল মুমিনের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে। এবং তা করতে না পারলে সালাতে ‘সুরা ফাতিহার ৫নং আয়াতে বলা কথাগুলো’ মুসলিমদের জন্য মিথ্যা না হয়ে কি উপায় আছে? আর সালাতে বলা ‘এ মিথ্যার পরিণতি’ কত ভয়াবহ হতে পারে, তা কি আমরা সব থেকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে ‘অগ্রাধিকার কর্ম’ হিসেবে নেব না? পরিস্কার হচ্ছে না, তাই না? হবে কি করে? সব কাজে এগিয়ে থাকলেও আমরা কুরআন জানা-বোঝায় পিছিয়ে নই কি? এ অবস্থার পরিবর্তন করতে সুরা ফাতিহার উপরিউক্ত ৫নং আয়াতটির দাবীর করণীয় মেটানোকো গভীর ভাবনায় নিন । আর এ ভাবনায় যদি আল্লাহ আপনার উপর নেক নজর দেন, তাহলে ইসলামকে তার স্ব স্ব স্থানে বসাবার কাজকে অগ্রাধিকার দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবানের তালিকায় অন্তর্ভূক্তির আয়োজন শুরু করুন। এ এমন এক ভাগ্য যার বিকল্প কিছু নেই।
ইসলামকে তার স্ব স্ব স্থানে বসিয়ে বহু আকাঙ্খিত বিস্ময়কর শান্তি ও কল্যান অর্জনের পথে করণীয় কিছু প্রাথমিক প্রস্তুতির, দায়-দায়িত্বের কথা নিয়ে এ লেখনি হাজির হয়েছে, যা বাদ দিয়ে ইসলামকে তার ‘আসল একক রুপে’ মানবতার নিকট উপহার দেওয়া সম্ভব নয়-যদিও এটিকে একমাত্র ‘প্রাথমিক প্রস্তুতি’ না বলাই দরকার। আর এ শুরুর কাজে প্রতিটি সচেতন মুসলিমের অংশ গ্রহন দাবী রাখে-যে দাবীর মূল কথা হচ্ছে, দায়িত্বহীন মুসলিম সমাজের ঘুম ভাঙ্গিয়ে তাদেরকে ভালবেসে, বুকে জড়িয়ে ইসলামের কাঙ্খিত মঞ্জিলে পৌঁছানোর তরীতে উঠিয়ে দেওয়া।
