মধ্যপন্থি উম্মতের ধারণা

সহীহ্ বোধদয়ের স্বার্থে দায়িত্ব মনে করলে অনুগ্রহপূর্বক শেয়ার করুন:

🕮 “আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী উম্মাতে পরিণত করেছি, যাতে তোমরা দুনিয়াবাসীদের ওপর সাক্ষী হও এবং রসূল তোমাদের ওপর সাক্ষী হন” (কুরআন:২বাকারা:১৪৩)। মধ্যপন্থি উম্মতের ধারণা এটাও নেওয়া যেতে পারে যে, মুসলিমরা অন্য ধর্মের মত দুনিয়া ত্যাগ করে সন্নাস জীবন যাপন করবে না আবার কিছু জাতির মত নিছক ভোগ সর্বস্ব বস্তুবাদি (দুনিয়াতে বস্তু ভোগ আর বিনোদনই হচ্ছে জীবন এর বিপরীতে গুরুত্ব দেবার মতো কিছু নেই) জীবন যাপন করবে না। দুনিয়াকে উপেক্ষা না করে আবার তাতে অপ্রয়োজনীয় সম্পদ অর্জনে ও অতিরিক্ত দুনিয়াদারীতে লিপ্ত না হয়ে  সাহাবা অনুসৃত মধ্যমপন্থী জীবন যাপন করবে। হেদায়েত ও পথনির্দেশ প্রদানকারী আল কোরআনের এ আয়াতে আল্লাহ তার হুকুম দুনিয়াবাসীর কাছে পৌঁছাবার উপায় বলে দিয়েছেন-যার দু’টি ক্রম ধারা রয়েছে। প্রথমে মহানবী (সা) আল্লাহর হুকুমের তাত্বিক পরিবেশনা করার পাশাপাশি নিজ জীবন-কর্ম দিয়ে দেখিয়ে প্রমান করেছেন যে, এ দুনিয়ার মালিক আল্লাহ (সুব) নিজ সৃষ্ট এ জমিনের সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র অধিকারী, সকল আইন কর্তৃত্ব তাঁরই। তাই সে সার্বভৌমত্ব যথাস্থানে ক্রিয়াশীল করে তাতেই মুমিনরা তৌহিদ ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ দ্বীনি জীবন যাপন করবে এবং তাতেই তাদের দাসত্ব পরিপূর্ণ হতে পারবে-যার জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পূর্ণাঙ্গ দাসত্ব তখনই হবে যখন তাদের ব্যক্তি, সমাজ ও প্রশাসনের সকল কাজই কুরআন-সুন্নাহর বিধান মতো হবে। মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা) তাঁর ব্যক্তি, সমাজ ও প্রশাসন পর্যায়ে তা করে দেখিয়েছেন-যা মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে চুড়ান্ত রুপ নিয়েছিল। কোনো ভূখন্ডে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কায়েম থাকলে সেখানে সকল জীব ও জড়র মধ্যে তৌহিদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে এবং সেখানে তৌহিদের প্রতিষ্ঠীত হবার কারণে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ্যত্ব ও সার্বভৌম ক্ষমতার কল্যানকারীতা সবাই দেখবে, ভোগ করবে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ‍ধনী-গরীব, ক্ষমতাসীন ও সাধারণ নাগরিক সবাই একই পর্যযয়ে বিবেচিত হবে। আর এর ফলশ্রুতি হবে ‘মানুষ সহ অন্যান্য সকল জীব ও জড় না চাইতেই তাদের অধিকার পাবে এবং চাওয়া মাত্রই বিলম্বহীন সুবিচার পাবে। এমন পরিস্ফুটন যেমন আল্লাহ নির্দেশিত ব্যক্তি জীবনের সকল আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক দাসত্বে (এবাদেত) ফুটে ওঠে তেমনি ফুটে ওঠবে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল কর্মকান্ডে, আল্লাহর দেয়া সকল হুকুম-বিধান প্রয়োগ ও পালনের মহাসমারোহ। এ কাজটি আল্লাহর রসুল ‘খেলাফতে আ’লা মিনহাজুন্‌ নবুয়ত’ কায়েম ও তার প্রশাসনিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন করে হক্বের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। এবং তার পরে খোলাফায়ে রাশেদা সে ধারা চালু রেখে সত্যের সাক্ষ্য অব্যাহত রাখেন। এ উভয় সময়ে হক্বের এ সাক্ষ্য ব্যক্তি ও সামষ্টিক পর্যায়ে প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মগুলা সে সাক্ষ্য দানের ধারা চালু রাখতে ব্যর্থ হবার (ইসলাম নিন্দিত লোভ, ভোগ-আরাম-সুখ ভোগের, অতিরিক্ত সম্পদ সংগ্রহের লোভ এবং ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে হক্বের সাক্ষ্য দানে অনীহ হওয়া, মৃত্যু ভয়ে ভীতি থাকা ইত্যাদিতে লিপ্ততায়) কারনে মুসলিম জনপদগুলো হারিয়েছে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং এর ফলাফল হয়েছে এই যে, মুসলিমরা নিজেদের আংশিক তৌহিদকে ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রেখেছে, সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবনে শয়তান ও তাগুতি শক্তির আনুগত্য তাদেরকে এতটুকু বিচলিত করছে না। এই আপোষকামী মন তৌহিদ বর্জিত ও শির্কযুক্ত শরীরে ঈমান খুঝঁতে পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? আদৌ কি আছে? কিন্তু কোনো মুসলিম ভূখন্ডের মানুষ এ অবস্থা কি করে চলতে দিতে পারে? এমতাবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ট  মুসলিম বিশ্বের মুমিনদের কাজ হচ্ছে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নবীর (সা) অনুকরণে তার উম্মতরাও ইসলামের শিক্ষা ছড়ানোর সাথে সাথে তার বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজ ও প্রশাসনে ইসলামের কল্যানকমীতা কর্মে ফুটিয়ে তুলবে। এ জন্য সাহাবা (রা) অনুসরণে শ্রম, সময় অর্থ খরচ করবে, ত্যগ-কুরবানি স্বীকার করবে। আর এটাই হবে দুনিয়ার মানুষের কাছে উম্মতে মুসলিমার সাক্ষ্য প্রদান। তাই এটা কি জরুরী নয় যে, সাক্ষ্যদানের এ কাজটির গুরুত্ব সবার কাছে আপনাকেও তুলে ধরতে হবে। কারণ এ কাজটি বাদ দিয়ে মুমিন দুনিয়াতে তার অবস্থান ভাবতে পারে না যেমন পারেননি সাহাবাগন। জান্নাত পেতে এটা অতি জরুরী বিধায় এ জ্ঞান নিয়ে কোনো মুমিন বসে থাকতে পারে না। আপনাকেও কাজে নেমে পড়তে হবে। এবং তা এখনই।